বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ০৮:০৯ পূর্বাহ্ন
টপ নিউজ::
শেরপুরে ঝগড়ারচর বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২ কোটি টাকার ক্ষতি সাবেক সাত মন্ত্রী এক বিচারপতি সহ ২২ ভিআইপির মুক্তিযোদ্ধা সনদ তলব নকলা হাসপাতালে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগীয় মাসিক সমন্বয় সভা আওয়ামী দোসরদের নিয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব দখলের চেষ্টা, ১০ সাংবাদিক আহত নোয়াখালীতে ১০ বছরের ওয়ারেন্ট ভুক্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার সিরাজগঞ্জে বানিয়াগাঁতী স্কুল এন্ড কলেজে  বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে মাটি কাটার গাড়ি জব্দ কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলাতে ২২১০০ পিস ইয়াবাসহ ১ এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক সুবর্ণচরে বিধবাকে গণধর্ষণ, পলাতক আসামী গ্রেপ্তার ১ মানসিক ভারসাম্যহীন যুবতী ধর্ষণের শিকার, এলাকায় উত্তেজনা

ইতিহাসের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড নেছারাবাদের মিয়ারহাট বন্দরে

সোহেল রায়হান, নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি / ৩৮ বার
আপডেট সময় :: বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ১:২০ অপরাহ্ন

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার মিয়ারহাট বন্দরের প্রায় ৬০ টি দোকানঘর মালামাল সহ ভয়াবহ লেলিহান আগুনে পুড়ে ছাই।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৬ টার দিকে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এলাকাবাসী ও বয়োজেষ্ঠদের তথ্য মতে উপজেলার ইতিহাসে ভয়াবহ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণে সবচেয়ে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এটি। প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য মতে জানা গেছে, বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিটের মাধ্যমে এই অগ্নিকাণ্ডের উৎপত্তি।

নেছারাবাদ উপজেলাধীন সুটিয়াকাঠি ইউনিয়নের মিয়ারহাট বন্দরের মাছ বাজার সংলগ্ন মোঃ মাসুদ মিয়ার একটি পাখি বিক্রির দোকান, যেখানে মুরগির বাচ্চা ফোটানোর মেশিন দ্বারা হাঁস মুরগির বাচ্চা ফোটানো হয় এবং সেই দোকানে সার্বক্ষণিক বৈদ্যুতিক মেশিন চালু রাখা হয়।

প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হয়, এ কারনে এই দোকান থেকেই বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিটের মাধ্যমেই আগুনের সূত্রপাত।

সরেজমিনে প্রত্যক্ষদর্শী এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেছেন, প্রথমে মাসুদের পাখির দোকানে আগুন জ্বলতে দেখা যায় এবং সেখান থেকেই মূলত আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পরোক্ষনে খুব দ্রুততার সাথে আগুন আশপাশের অন্যান্য দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের কয়েকটি দোকানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য – মুদি দোকান, কসমেটিক্সের দোকান, কাপড়ের দোকান, জুতার দোকান, রঙের দোকান, চায়ের দোকান, বরফকল, লোহা সামগ্রীর দোকান, হাস মুরগির ঔষধ ও ফীডের দোকান, মাছের আড়ৎ ও বিভিন্ন ধরনের গোডাউন সহ ছোট বড় প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ টি দোকানঘর মালামাল সহ এই ভয়াবহ লেলিহান আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে নেছারাবাদ উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে এলাকাবাসীর সহযোগিতা নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। ততক্ষণে আগুন মিয়ারহাট মাছ বাজারের চারদিকের দোকানঘর গুলোতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে প্রায় ২ ঘন্টা পর ফায়ার সার্ভিসের আরো দুইটি ইউনিট (কাউখালি ও বানারিপাড়া ইউনিট) এসে প্রায় ৩/৪ ঘন্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ততক্ষণে বন্দরের প্রায় ৬০ টি দোকানঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে প্রায় ৫০/৬০ টি পরিবার প্রকৃতির নির্মম পরিহাসে অসহায়ত্ব বরন করে একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়। এই দিনে দোকান মালিক ও ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের কান্না ও আহাজারীতে পুরো এলাকা ভারী হয়ে ওঠে।

ভুক্তভোগী দোকানদার/ ভাড়াটিয়া আলহাজ্ব মোঃ আমীর হোসেন বলেন, তার দুইটি কসমেটিক্সের দোকান ও একটি গোডাউন মালামাল সহ পুড়ে একেবারে ছাই হয়ে গেছে। এতে তার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক থেকে দেড় কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন।

অন্যদিকে অন্য একটি দোকানের মালিক মোঃ সোহেল মৃধা বলেন, সকালে আগুন লাগার খবর পেয়ে যখন বাজারে ছুটে আসি তখন এসে দেখি আগুনের তীব্রতা অত্যান্ত প্রখর। এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় প্রায় তিন থেকে চার ঘন্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে, ততক্ষণে আমাদের বন্দরের ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ টি দোকান আগুনে পুড়ে ভষ্যিভূত হয়। এতে আমরা বিডি মালিক ও দোকানীরা ব্যপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হই। ধারনা করা হয় সবমিলিয়ে আনুমানিক প্রায় একশো থেকে দেড়শো কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে আগুন কিভাবে লাগে এবং কোথা থেকে সূত্রপাত তার সঠিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে অনেকের কাছে শুনেছি মাসুদের পাখির দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত।

আগুন নিয়ন্ত্রণের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ রায়হান মাহমুদ সহ নেছারাবাদ থানা পুলিশ ও রাজনৈতিক, সামাজিক এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সকলে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানী/ ব্যবসায়ীদের আর্থিক অনুদান ও সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন এবং সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

মঙ্গলবার বিকেলে পিরোজপুর জেলা ডিসি মহোদয়ের নির্দেশনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্বাবধানে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে উপজেলা কার্যালয়ের রিজার্ভে থাকা কিছু ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। ত্রান সামগ্রীর মধ্যে ছিল ৩৫ প্যাকেট শুকনো খাবার। প্রতি প্যাকেটে ছিল- ১০ কেজি চাল, ১ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি চিনি, ১ কেজি লবন, ১ লিটার সয়াবিন তেল সহ হলুদ মরিচ ধনিয়ার গুড়ো। এছাড়াও ৫ কেজি করে ৭০ প্যাকেট চাল এবং ১০০ পিছ কম্বল।

এসকল ত্রাণ সামগ্রী নেছারাবাদ উপজেলা পিআইও মোঃ আসাদুজ্জামানের মাধ্যমে মিয়ারহাট বন্দর বাজার কমিটির সেক্রেটারি মোঃ বাদল বেপারী ও ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মৃনাল কান্তি মন্ডলের হাতে তুলে দেন। পরবর্তীতে বাজার কমিটি সেক্রেটারি, ইউপি সচিব ও ইউপি সদস্যগন সহ এলাকার গ্রাম পুলিশের সহায়তায় লিস্ট করে সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

এই অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।


আপনার মতামত লিখুন :
এ জাতীয় আরো খবর
Theme Created By ThemesDealer.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!