বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ০৭:১৪ পূর্বাহ্ন
টপ নিউজ::
শেরপুরে ঝগড়ারচর বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২ কোটি টাকার ক্ষতি সাবেক সাত মন্ত্রী এক বিচারপতি সহ ২২ ভিআইপির মুক্তিযোদ্ধা সনদ তলব নকলা হাসপাতালে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগীয় মাসিক সমন্বয় সভা আওয়ামী দোসরদের নিয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব দখলের চেষ্টা, ১০ সাংবাদিক আহত নোয়াখালীতে ১০ বছরের ওয়ারেন্ট ভুক্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার সিরাজগঞ্জে বানিয়াগাঁতী স্কুল এন্ড কলেজে  বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে মাটি কাটার গাড়ি জব্দ কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলাতে ২২১০০ পিস ইয়াবাসহ ১ এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক সুবর্ণচরে বিধবাকে গণধর্ষণ, পলাতক আসামী গ্রেপ্তার ১ মানসিক ভারসাম্যহীন যুবতী ধর্ষণের শিকার, এলাকায় উত্তেজনা

বিএনপি’তে ঠাঁই পেতে মরিয়া সাতক্ষীরার আলোচিত সফি

মনিরুজ্জামান মনি, সাতক্ষীরা / ৪৩ বার
আপডেট সময় :: মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩০ অপরাহ্ন

কয়েক মাস আগেও সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা সাতক্ষীরার আলোচিত সফিউর রহমান সফি এবার ভোল পাল্টে বিএনপি’তে ঠাঁই পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের হোতা আলোচিত সফি’কে দলে ভেড়াতে নাম সর্বস্ব বিএনপি নেতার অভাব নেই। তবে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি’র মূল ধারার নেতারা জানিয়েছেন সফি নামের তাদের কোন নেতা বা কর্মী নেই। মিথ্যা পরিচয় দিলে পুলিশে দেওয়ার পরামর্শ দেন দলটির জেলা পর্যায়ে শীর্ষ নেতারা।

এব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহবায়ক এ্যাডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার হোসেন জানান, ‘সফিউর রহমান সফি নামে আমাদের কোন কর্মী বা নেতা নেই’। তিনি আরো বলেন, ‘কোন চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী আমাদের দলে ঠাঁই হবে না। নতুন করে দলে কেউ ভিড়তে পারবে না।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ বছরে আওয়ামী সরকারের সুযোগ সুবিধা ভোগ করে এবার একই পন্থায় বিএনপিতে যোগ দিয়ে নিজের অবস্থান ঠিক রাখতে চান সফি। তিনি সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা এলাকার সফিউর রহমান সফি একসময়ে ঠিকাদারি করলেও লাইসেন্স বাতিল ও বিভিন্ন কারনে তিনি দলীয় লেবাজ লাগিয়ে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে সাতক্ষীরা তালা উপজেলার বাসিন্দা একজন ডিআইজি ও অপর একজন সংসদ সচিবালয়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাকে কাজে লাগিয়ে জেলা ব্যাপি চাঁদাবাজীতে জড়িয়ে পড়েন। সেই সাথে গড়ে তোলেন একটি শক্তিশালী চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। সম্প্রতি আলোচিত সফি’র বিরুদ্ধে এলাকাবাসী বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে গণঅভিযোগ দিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয় ও জেলা প্রশাসকের দপ্তরে জমা দেওয়া অভিযোগ সূত্র জানায়, সফিউর রহমান সফি বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে পৌর আওয়ামীলীগ নেতা পরিচয়ে বিভিন্ন স্থানে প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে বিদ্যুত সংযোগের কথা বলে প্রচুর অর্থ আদায় করেছে। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে ২ লাখ ও ১ লাখ করে দুটি ¯িøপে মোট ৩ লাখ টাকা সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারাল ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখায় মেসার্স শফি এন্টারপ্রাইজ নামের একাউন্টে জমা করা হয়েছে। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তার কাছ থেকে চাঁদা হিসাবে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ইটাগাছা এলাকায় বিএনপি অফিসের নাম করে বাপাউবো এর শাখা কর্মকর্তা ও নির্বাহী প্রকৌশলীর থেকে মোট অংকের চাঁদা নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড, পওর-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সালাহউদ্দিন চাঁদা নেওয়ার ব্যাপারে কথা বলতে রাজি না হলেও তিনি বলেন খুব যন্ত্রনায় আছি। কিছুই বলার নেই। ইটাগাছা এলাকার বিএনপি নেতা রবিউল ইসলাম জানান, সফি’র যন্ত্রণায় এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। এমন কোন খারাপ কাজ নেই, যা সে করে না। বর্তমানে নির্দিষ্ট কোন পেশা না থাকলেও তিনি পুরোটায় চলে চাঁদার টাকায়। সফি’র জ্ঞাত আয় বর্হিভ‚ত সম্পদ রয়েছে। তার ব্যাংক একাউন্টে বড় বড় লেনদেন হয়। অথচ তার নির্দিষ্ট কোন আয় পেশা বা আয় নেই। তার স্ত্রী টিএনটি অফিসে চাকুরি করেন। তহলে কিভাবে সফি’র এত সম্পদ হয়। দুদক সঠিক ভাবে তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। প্রশাসনের কাছে এলাকাবাসী সফি’র শাস্থি দাবী জানান।

এলাকাবাসী জানান, বর্তমানে তার বাড়ি সাতক্ষীরা শহরে হলেও তার আদি বাড়ি সীমান্ত এলাকায়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সে প্রভাব বিস্তার করে এলাকায় গরুর খাটাল, মাদক, অস্ত্র, শাড়ি কাপড় ও স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িয়ে পরে। সে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রানালয়ের তালিকা ভ‚ক্ত চোরাচালানি ও হুন্ডি ব্যবসায়ী বলেও জানা গেছে। তদন্ত করলে তার অপরাধের রাম রাজত্ব খুজে পাওয়া যাবে। এলাকায় প্রচলিত আছে বীমার টাকা পাওয়ার জন্য সে তার পূর্বের দুই স্ত্রীকে হত্যা করেছেন। এ বিষয়ে তার পূর্বের স্ত্রীদের সন্তানদের নিকট তথ্য সংগ্রহ করা হলে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে। সে সরকারী কাজের বিরুদ্ধে কিংবা দরপত্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হাইকোর্টে রিট করে কমর্কর্তা ও ঠিকাদারদের জিম্মি করে অর্থ আদায় করে। ইতোপূর্বে সাতক্ষীরা পওর পানি উন্নয়ন-১ এর খাল পুন:খনন কাজের বিরুদ্ধে ২০২১-২০২২ সালে একটি রিট করে কাজটি অন্যের নামে নিয়ে বিশেষ কায়দায় অর্থ আদায় করেছে। সম্প্রতি সময়ে মজুমদার মানিকতলা খাল নিয়ে রিট করেছেন।

এবিষয়ে বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী সালাহউদ্দিনকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন, তাকে কাজ না দিয়ে অন্য কাউকে দিলে কাজ করতে দিবে না। একারনে সে রিট করেছে যাতে নির্বাচিত ঠিকাদার কর্তৃক কাজটি করতে দেরী হয়। তার সাথে না মিটিয়ে ঠিকাদার কাজ শুরু না করতে পারে। তার এধরনের অনৈতিক রিটের কারনে সাতক্ষীরা শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যা একটি বড় আকার ধারন করেছে। সফিউর রহমান শফি এলাকায় ফটকা শফি নামে পরিচিত। তার সাথে এলাকাবাসীর নিত্যদিন ঝামেলা লেগে থাকে। তার সাথে কারো ঝামেলা হলে গুলি করার হুমকি দেয়। ৫ আগষ্টের পরে সে নতুন করে একটি বাহিনী সৃষ্টি করেছে। যার মাধ্যমে সে শহরে প্রভাব বিস্তারসহ নিরীহ মানুষদেরকে জিম্মি করে চলেছে। ২০১৮ সালে এবি ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখার তৎকালিন ম্যানেজার খেলাপি ঋন আদায় ও সংশ্লিষ্ট সম্পদ ব্যাংকের অনুকুলে নেওয়ার জন্য আদালতে সফিউর রহমান সফির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটি চলমান।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, তার বাড়ির সামনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস হওয়ায় সে নির্বাহী প্রকৌশলীদেরকে  জিম্মি করে রাখতে নানা পন্থা অবলম্পন করে। অফিসাররা যদি তার কথা না শোনে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে নামে বেনামে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দুর্ণীতি দমন কমিশনে বিভিন্ন আবেদন করে। নিজের কোন লাইসেন্স না থাকলেও তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীদের অন্যের নামে কাজ দিতে বাধ্য করেন। এর আগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল খায়েরের কাছ থেকেও সুযোগ সুবিধা গ্রহন করেছে সে। পরে তিনি অনৈতিক সুযোগ সুবিধা দিতে রাজি না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে লাগাতার বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ করে চলেছে। বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী সালাউদ্দিনের নিকট হতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অর্থ আদায় করেছে। পওর-১ ডিবিশন থেকে ৩ লক্ষ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে নিয়েছে সফি। এব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব চেয়ারম্যান মো: আব্দুল আলিম বলেন, শফিউর রহমান শফি নামের কোন ব্যবসায়ী বা ব্যক্তি আমাদের সংগঠনে নেই। যদি চাঁদা দাবী করে তাহলে তাকে আটকে প্রশাসনের হাতে তুলে দিতে বলেন প্রবীণ এই রাজনীতিবীদ।

ইটাগাছা এলাকার শাহীন জানান, শফি আমাদের এলাকায় থাকলেও তার বাড়ি মূলত সীমান্তে। সাতক্ষীরা শহরে সে ফটকা শফি নামে সমধিক পরিচিত। তিনি কয়েক বছর আগে ঠিকাদারী করতেন এখন সে বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারি ও শহরের বিভিন্ন শেণী পেশার মানুষের বিরুদ্ধে ভ‚য়া অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করে। দু’এক জায়গা থেকে টাকা খেয়ে চেপে যায়। বর্তমানে তার এই পেশা ছাড়া আর কোন কাজ নেই। ইটাগাছা এলাকার শিমুল হাসান জানান, সফি’র স্ত্রী হত্যার বিষয়টি পূণ: তদন্ত করলে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিসারদের জিম্মি করতে আওয়ামী পন্থী ঠিকাদার বিএম রাজ্জাককে ব্যবহার করে কতিথ ভ‚মিহীনদের ভাড়া করে মানববন্ধন করাতো। অবশ্য পট পরিবর্তনের পরে রাজ্জাক পালিয়েছে। এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে সফি। তাকে আইনের আওতায় আনলে বড় চাঁদাবাজ চক্রের সন্ধান মিলবে।

ইটাগাছা এলাকার রেজাউল জানান, সফি একজন ঋণখেলাপী সে কিভাবে অন্যের লাইসেন্সে কাজ করে। তাকে যারা এবিষয়ে সহযোগীতা করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান। এসব বিষয়ে সফিউর রহমান সফি জানান, তিনি কোন অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নন। তিনি কোন সময় আওয়ামী লীগ করেননি। নির্দিষ্ট কোন পেশা না থাকলেও কিভাবে এত সম্পদের মালিক এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি ব্যবসায়ী। তবে ব্যবসায়িক লাইসেন্স আছে কি’না এমন প্রশ্নে কোন জবাব দেননি তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :
এ জাতীয় আরো খবর
Theme Created By ThemesDealer.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!