বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ০২:৪৬ পূর্বাহ্ন
টপ নিউজ::
শেরপুরে ঝগড়ারচর বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২ কোটি টাকার ক্ষতি সাবেক সাত মন্ত্রী এক বিচারপতি সহ ২২ ভিআইপির মুক্তিযোদ্ধা সনদ তলব নকলা হাসপাতালে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগীয় মাসিক সমন্বয় সভা আওয়ামী দোসরদের নিয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব দখলের চেষ্টা, ১০ সাংবাদিক আহত নোয়াখালীতে ১০ বছরের ওয়ারেন্ট ভুক্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার সিরাজগঞ্জে বানিয়াগাঁতী স্কুল এন্ড কলেজে  বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে মাটি কাটার গাড়ি জব্দ কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলাতে ২২১০০ পিস ইয়াবাসহ ১ এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক সুবর্ণচরে বিধবাকে গণধর্ষণ, পলাতক আসামী গ্রেপ্তার ১ মানসিক ভারসাম্যহীন যুবতী ধর্ষণের শিকার, এলাকায় উত্তেজনা

৫ ছেলে-মেয়ের সংসারে বিধবা নারী সখিনা বেগমের দিনকাটে অনাহারে-অর্ধাহারে

মুরাদ শাহ জাবাল, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) / ২৬৬ বার
আপডেট সময় :: বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০২৫, ১১:৫৫ অপরাহ্ন

৫ ছেলে- মেয়ের সংসারে বিধবা নারী সখিনা বেগমের দিনকাটে অনাহারে অর্ধাহারে। ভাগ্যে জুটেনা সরকারি কোন সাহায্য সহায়তা।

সখিনা বেগম (৪৫) শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের গোমড়া গ্রামের মরহুম আব্দুল্লাহ’র স্ত্রী। ৩ ছেলে ও ২ মেয়েসহ ৬ সদস্যের পরিবার সখিনা বেগমের। ২ মেয়ের বিয়ে সাদি হয়েছে। ১ ছেলে বিয়ে করেছে ছেলের ঘরে ১ কন্যা সন্তান। দিনমজুর ছেলে তার সংসারই নিজে চালাতে হিমসিম খাচ্ছে ছেলে। সহায় সম্বল বলতে কিছুই নেই বললেই চলে তাদের ।

সখিনা বেগম জানান সরকারি ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত ৮ শতাংশ জমির উপর একটি টিনের ঘরে বসবাস করতেন স্বামী সন্তানদের নিয়ে সখিনা বেগম। সখিনা বেগমের স্বামী আব্দুল্লাহ ছিল একজন দিনমজুর। দিনমজুরি করে যা পেত তাই দিয়ে কোনরকমে চলতো তাদের সংসার। ২০২০ সালে সখিনা বেগমের স্বামী আব্দুল্লাহ অসুস্থ্য হয়ে বিছানায় পরে।

এসময় সংসারের পুরো দায়ভার এসে পড়ে সখিনার কাধে। সখিনা বেগম দিনমজুরি করে যা পায় তাই দিয়ে অসুস্থ স্বামী আব্দুল্লাহসহ পরিবারের সদস্যদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। কিন্তু টাকা পয়সার অভাবে স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারছিল না সখিনা বেগম। উপায়ান্তর না দেখে স্বামীর চিকিৎসা ও সন্তানদের ভরণপোষণ যোগাতে সখিনা বেগম তাদের থাকার ঘরসহ ৫ শতাংশ জমি বিক্রি করে দেন। সর্বস্ব খুইয়েও কোন কাজে আসে না। সখিনা বেগম দিনমজুরি করে স্বামীসহ পরিবারের সদস্যদের ভরনপোষণ যোগাতে হিমসিম খাচ্ছিল। এ পরিস্থিতি সহ্য করতে না পেরে ২০২১ সালে অসুস্থ আব্দুল্লাহ বিষ পানে আত্মহত্যা করেন। এসময় সর্বস্ব খুইয়ে সখিনা বেগম বিপর্যস্ত হয়ে পরে। অবশিষ্ট ৩ শতাংশ জমির উপর গ্রামবাসীদের সহায়তায় ভাঙ্গাচুড়া কয়েক ফর্দ টিনের একটি ছাপড়া ঘরে সন্তানদের নিয়ে সখিনা বেগম বসবাস করে আসছেন। ঘরটি বসবাসের অনুপযোগী। ঘরে নেই একটি চৌকিখাট। বৃষ্টির দিনে ঘরের একপাশ থেকে অপর পাশ পর্যন্ত পানি প্রবেশ করে। রৌদ্রের সময় ঘরে টিকে থাকা দায়। মুর্দা কথা এ ঘরে রোদ বৃষ্টিতে একটু আরাম আয়েশের কোন সুযোগ নেই। দিনমজুরি করে সখিনা বেগমের যা আয় হয় তাই দিয়ে কোনরকমে খেয়ে না খেয়ে দিনকাটে সখিনা বেগমের। একদিন কাজে না গেলে বা কাজ না পেলে সেদিন থাকতে হয় তাদের অনাহারে-অর্ধাহারে।

স্বামী মারা যাওয়ার ৪ বছরে সখিনা বেগমের ভাগ্যে জুটেনি একটি বিধবা ভাতার কার্ড কিংবা সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা। সখিনা বেগম জানান দিনমজুরি করে যা পায় তা দিয়ে সংসার চলে না। এক বেলা খাবার জুটলে আরেক বেলায় নেই। আবার একদিন কাজে না গেলে সেদিন তাদের ঘরে চুলা জ্বলে না। সেদিন তাদের থাকতে হয় অনাহারে-অর্ধাহারে।

সখিনা বেগম জানান, তার স্বামী মারা যাওয়ার পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে সরকারি সাহায্য সহযোগিতার জন্য বহুবার গিয়েছেন। কিন্তু তার ভাগ্যে জুটেনি কোন সাহায্য সহযোগিতা। আর্থিক সংকটের কারনে সখিনা বেগম তার সন্তানদের পড়াশোনাও করাতে পারছেন না । অতিকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন পরিবারটি।

বৃহস্পতিবার ৬ মার্চ সরেজমিনে গোমড়া গ্রামে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও সখিনা বেগমের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সখিনা বেগম জানান তার বাড়িতে গত দুই দিন ধরে চুলা জ্বলেনি। সেহরি না খেয়েই রোজা রেখেছেন সখিনা বেগম। কিন্তু শিশু সন্তানদের খাবার যোগাড় করতে না পেরে এসময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সখিনা বেগম।

বিষয়টি জানতে পেরে শেরপুরের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ইলিয়াস উদ্দিন ২৫ কেজি চাল, ২ কেজি ছোলা,২ কেজি ডাল, ৫কেজি আলু, ২কেজি রশুন,১ কেজি তেল,১ কেজি কাচা মরিচ,লবনও রশুনসহ ৩ হাজার টাকা মূল্যের খাদ্য সামগ্রী সখিনা বেগমের বাড়িতে পৌঁছে ইলিয়াস উদ্দিন তার নিজস্ব লোক নুর ইসলামের মাধ্যমে। প্রায় ১৫ দিনের এসব খাদ্য-সামগ্রী পেয়ে খুশিতে আত্মহারা শিশু সন্তানসহ সখিনা বেগমের পরিবারটি ।

এ ব্যাপারে নলকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুকুনুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন বিষয়টি দেখভাল করার কথা সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য। সখিনা বেগমের এ অবস্থা বিষয়টি তার জানা নেই। পরবর্তীতে তিনি দেখবেন বলে জানান।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম রাসেলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন বর্তমানে সরকারি ভাবে কোন সহায়তা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান।


আপনার মতামত লিখুন :
এ জাতীয় আরো খবর
Theme Created By ThemesDealer.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!