বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হতে পারে ক্ষুদ্র উদ্যোগ খাত। বর্তমানে দেশের মোট কর্মসংস্থানের অর্ধেকেরও বেশি ক্ষুদ্র উদ্যোগ খাতে, কিন্তু জাতীয় আয়ে এ খাতের অবদান মাত্র এক চতুর্থাংশের মতো। এ পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে হলে, অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোগ খাতে অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর।
শনিবার ২৪ মে ২০২৫ পিকেএসএফ কর্তৃক চালুকৃত দেশের প্রথম ‘ক্রেডিট এনহ্যান্সমেন্ট স্কিম’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, পিকেএসএফ-এর বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ এখন মাত্র ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো, যা দশগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। আর্থিক কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধি, মানুষের অর্থের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং আর্থিক খাতে অনিয়ম হ্রাসের লক্ষ্যে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গঠনের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে পিকেএসএফ ও এর সহযোগী সংস্থাগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি দেশের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে দাদন ব্যবসায়ীদের হাত থেকে মুক্ত করে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।
রাজধানীর আগারগাঁওস্থ পিকেএসএফ ভবনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিকেএসএফ চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বাংলাদেশ মিশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: ফজলুল কাদের। অনুষ্ঠানে ক্রেডিট এনহ্যান্সমেন্ট স্কিম ও ক্ষুদ্র উদ্যোগ খাত বিষয়ক দু’টি উপস্থাপনা প্রদান করেন যথাক্রমে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মশিয়ার রহমান এবং সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো: রওশন হাবীব।
ক্রেডিট এনহ্যান্সমেন্ট স্কিমর সম্পর্কে জাকির আহমেদ খান বলেন, “দেশের নিম্ন আয়ের মানুষদের উদ্যোক্তায় রূপান্তরের যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পিকেএসএফ, তাতে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পৃক্ত করা উদ্দেশ্যে এ স্কিম চালু করা হচ্ছে। এর আওতায় ব্যংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পিকেএসএফ-এর সহযোগী সংস্থাগুলো মাঠ পর্যায়ে উপযুক্ত গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করবে। ব্যাংক পর্যায়ে এ ঋণের যা ঝুঁকি থাকবে, তার পুরোটার গ্যারান্টি দিবে পিকেএসএফ”। তিনি আরো বলেন, পিকেএসএফ সারা দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের একটি ডেটাবেইজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, যা এসব উদ্যোগে অর্থের প্রবাহকে অধিকতর গতিশীল ও কার্যকর করতে সহায়ক হবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক বাংলাদেশের ক্ষুদ্র উদ্যোগ খাতে পিকেএসএফ এবং সহযোগী সংস্থাগুলোর অবদানের প্রশংসা করে বলেন, পিকেএসএফ-এর ঋণ আদায়ের হার ৯৯.৯ শতাংশ এবং তাদের ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ হয় না। তিনি দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ক্ষুদ্র উদ্যোগ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
পিকেএসএফ-এর সাথে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অংশীদারিত্বের প্রসঙ্গে এডিবি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং বলেন, ১৯৯৭ সাল থেকে উন্নয়ন সহযোগীটি পিকেএসএফ-এর সাতটি প্রকল্পে ৩৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করে। এর মধ্যে, ২০২৩ সালে পিকেএসএফ-এর এমএফসিই প্রকল্পে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করা হয়। এ প্রকল্পেরই একটি কম্পোনেন্ট হিসেবে ক্রেডিট এনহ্যান্সমেন্ট স্কিম চালু করা হলো। “আমরা আশাবাদী যে, ক্রেডিট এনহ্যান্সমেন্ট স্কিম সফল হবে এবং এটি বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ খাতে আরও আর্থিক উদ্ভাবনের পথ প্রশস্ত করবে”।
পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ফজলুল কাদের বলেন, দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিতে ক্ষুদ্র উদ্যোগ খাতের অমিত সম্ভাবনা থাকলেও এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ এবং উন্নত প্রযুক্তির অভাব রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৯০ লক্ষ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রয়েছেন, যাদের মধ্যে ৪০ লক্ষ পিকেএসএফ-এর আওতায় ইতিমধ্যে সংগঠিত। বর্ধিত অর্থায়ন, লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং সময়োপযোগী বিপণন ব্যবস্থা নিশ্চিতের মাধ্যমে ক্ষুদ্র উদ্যোগ খাতের উন্নয়নের ওপর জোর দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে পিকেএসএফ-এর সাথে পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও একটি বিনিয়োগ কোম্পানির চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেন, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর আরেফিন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, প্রাইম ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল রহমান, সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) আবিদুর রহমান চৌধুরী এবং দ্যা ইউএই-বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি (ইউবিকো) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) এম এম মোস্তফা বিলাল নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।