- - https://dailyjogajog.com -

খোলা চিঠি

খোলা চিঠি

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
সালাম নিবেন।

জানি এই লেখা আপনার কখনোই চোখে পড়বেনা।

তবুও লিখছি। নিজের মনের শান্তির জন্যই লিখছি।

আমি একজন নগণ্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।

আমার ভাই-বোন সবার বয়স চল্লিশ পার হয়েছে। কারো বিসিএস দেয়ার বয়স নেই।

আর আমার দুই মেয়ে এখনো অনেক ছোট। ওরা বিসিএস দিবে কিনা জানিনা তবে আমি হয়তো ওদের কখনো বলবোনা, তোমরা বিসিএস দাও। আমাকে কখনো ওসব চাকুরী টানেনি, এত চাকচিক্যের পরেও এখনো টানেনা।

তাছাড়া, এত বছর পর ওরা আদৌ এই দেশে থাকবে কিনা আমি ঠিক নিশ্চিত নই। আর ততদিন বিসিএস এর এই চাকচিক্য থাকবে কিনা, তাও জানিনা।

তাছাড়া, আওয়ামী লীগ – বিএনপি, রাজনীতি ইত্যাদি আমার ঠিক আগ্রহের বিষয় নয়। আমি পড়াশুনা, গবেষণা ইত্যাদি নিয়েই থাকি। আজীবন এরকমই থাকতে চাই।

তবে একজন দেশপ্রেমিক, সচেতন এবং কিছুটা শিক্ষিত মানুষ হিসেবে সবসময় সত্যি কথাটা বলার চেষ্টা করি। এর বাইরে কোন দলের রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি করে কোন পদ পদবীর আশা জীবনে করিনি, আগামীতেও করার ইচ্ছে নেই।

যাহোক, কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে কোটি মানুষের নৈতিক সমর্থনে আমার মতো অনেকের হয়তো ব্যক্তিগত কোন লাভ নেই, বিন্দুমাত্র লাভ নেই।

কোটা ব্যবস্থার ন্যায্য সংস্কার হলে, ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হলে মানসিক শান্তি পাবো। স্রেফ এতটুকুই, এর বেশি কিছু নয়।

তবে একটা বিষয়, এই আন্দোলনের প্রথম থেকেই নীতি নির্ধারণী মহল থেকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। কারো গায়ে একটা ফুলের টোকাও না দিয়ে যেটা স্রেফ তিন দিনেই সমাধান করা যেতো, সেটা আজ কত দূর এলো! তিল থেকে তাল হলো। এত তাজা প্রাণ গেলো, এত সম্পদহানী হলো।

এখন এই আন্দোলনে কারো অনুপ্রবেশ হলো কিনা সেটা আপনারা ভালো বলতে পারবেন। তবে এতটা দীর্ঘ সময় ধরে এরকম আন্দোলন চললে, সেখানে কারো অনুপ্রবেশ কেন, সরাসরি কেউ প্রবেশ করলেও অবাক হওয়ার হয়তো তেমন কিছু নেই।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি – আপনার মন্ত্রীসভায় হয়তো একজন মানুষও নেই, যিনি আন্দোলনের প্রথম দিকেই আপনাকে একটু সাহস করে বলবেন, “ম্যাডাম, ছাত্রদের ডেকে কথা বলে এই বিষয়টি দ্রুত মিটমাট করে ফেলুন”

আপনার উপদেষ্টা পরিষদেও হয়তো কারো এরকম সৎ সাহস নেই। কেন নেই, আমি ঠিক জানিনা।

শুধু প্রথম দিকে নয়, হয়তো এখনো আপনাকে সাহস করে কেউ কিছু বলেনা। কেন বলেনা, আমার কোন ধারণা নেই।

আরেকটি বিষয় না বললেই নয় – আপনার আশে পাশে কে তাজউদ্দীন, কে খন্দকার মোশতাক আর কে শুধুই সুবিধাবাদী চাটুকার, সেটা নিশ্চয়ই আপনি সবার চেয়ে ভালো বুঝবেন।

আশা করি, একেবারে নির্মোহ দৃষ্টিতে বিষয়টি ভেবে দেখবেন।

একজন নগণ্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হয়ে ছোট মুখে অনেক বড় কথা বলে ফেলায় আমার ধৃষ্টতাকে আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

আপনার জন্য নিরন্তর শুভকামনা রইলো।

আমাদের মাতৃভূমিটা ভালো থাকুক। সবাই নিরাপদে থাকুক।

ধন্যবাদ।

বিনীত,
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক
প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়