শেরপুরের নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে সিজার অপারেশন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। উপজেলার কাজাইকাটা গ্রামের হাবিবুল্লাহর সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর প্রসব ব্যথা শুরু হলে তাকে শনিবার দুপুরের দিকে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। প্রথমে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান ভূমিষ্ঠ করাতে সমস্যা মনে হওয়ায় তাকে নকলা হাসপাতালেই সিজার অপারেশনের মাধ্যমে প্রথম বারের মতো এ হাসপাতালে বিনামূল্যে সিজার অপারেশন কার্যক্রম শুরু করা হয়।
এরআগে এ হাসপাতালে নিয়মিত নরমাল ডেলিভারি করা হলেও শনিবার (২৮ জুন) থেকে নরমাল ডেলিভারির পাশাপাশি সিজারিয়ান সেকশন চালু করায় দরিদ্র পরিবারের সন্তানসম্ভবা মায়েদের বিনামূল্যে সিজারিয়ান সুবিধা নেওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।
এমন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে এলাকার জনগণের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে আরো একধাপ এগিয়ে গেলো নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে বিনামূল্যে সিজার অপারেশন কার্যক্রম শুরু হওয়ায় সন্তানসম্ভবা দরিদ্র পরিবারের নারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে।
জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা’র নেতৃত্বে অভিজ্ঞ চিকিৎসকগন সিজার অপারেশন সফলতার সহিত সম্পন্ন করেন। এতে পুত্র সন্তান জন্ম দেয় মা সাদিয়া আক্তার। নবজাতক শিশু ও প্রসূতি মা সুস্থ্য আছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকগন।
অপারেশ চলাকালে গাইনী কনসালট্যান্ট ডা. উম্মে রাকিবা জাহান মিতু, এনেস্থিসিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. রিয়াজুল করিম, শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. ইফতিখারুল আলম তানভীর, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নাঈমা ইসলাম পিংকিসহ নার্স ও প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীগন এ অপারেশ কার্যক্রমের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন।
নবজাতকের বাবা হাবিবুল্লাহ জানান, বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে সিজার করালে প্রায় ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা ব্যয় হত। যা বহন করা তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব ছিলো। নিজ উপজেলার সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে সিজার অপারেশনের সুযোগ পেয়ে সে ও তার পরিবারের লোকজন সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞ জ্ঞাপন করেছেন।
এদিকে উন্নয়মূলক তথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাইল ফলক ছোঁয়া সফলতার এমন সংবাদ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সর্বসাধারনের মনে স্বস্তি এবং এক প্রকার উচ্ছ্বাস বিরাজ করতে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই নিজ নিজ অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে জানান, এ সফল প্রমাণ করে দক্ষ পরিচালনা, অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছা থাকলে উপজেলা পর্যায়েও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে সিজার অপারেশন কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজ নিজ মতামত প্রকাশ করেছেন। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে আরো উন্নত স্বাস্থ্যসেবা চালু করার আশা ব্যক্ত করেছেন তারা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন ‘আমার স্বপ্ন ছিল এই হাসপাতালে অপারেশন চালু করব এবং গরীব ও দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে সিজারিয়ান অপারেশন নিশ্চিত করব। সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ শাহিন স্যারের নির্দেশ ও পরামর্শক্রমে আজ প্রথমবারের মত সিজারিয়ান কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হলো।’ তিনি আরো বলেন ‘এই সফলতা বা অর্জন নকলা হাসপাতালে কর্মরত সবার ও সকল অংশীজনের। আর প্রাপ্তি নকলা উপজেলাবাসী সবার। কারন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সবার অংশ গ্রহনেই আজ নকলা হাসপাতাল এই অবস্থানে উঠেছে। তিনি আরো জানান, সন্তানসম্ভবা কোন নারী হাসপাতালে ভর্তি হলে প্রথমে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান ভূমিষ্ঠের চেষ্টা করা হবে। তাতে কোন সমস্যা অনুভব হলে তবেই কেবল সিজার অপারেশন করা হবে।’ এক্ষেত্রে সকলকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি কেউ বিনামূল্যে সিজার অপারেশনের সুবিধা নিতে চাইলে নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করার পরামর্শ প্রদান করেন ডা. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা।